বিউটিফিকেশনে ‘শিম’ আর ‘লালশাক’

ইরান হচ্ছে ফুলের দেশ। প্রচণ্ড শীত আর তুষারপাত শেষে আসে নওরোজ অর্থাৎ নতুন বছর। তখন থেকে ইরানে বিশেষ করে রাজধানী তেহরানে দেখা যায় ফুলের বাহার। কত রঙের, কত রূপের যে ফুল তার ঠিক নেই! ইরানে ‘বাহার’ শুরু হয় নওরোজ দিয়ে। ফার্সি ভাষায় ‘বাহার’ শব্দের অর্থ বসন্ত। আমাদের বাংলাদেশে যখন বসন্ত আসে ঠিক তার কাছাকাছি সময়ে ইরানেও বসন্ত আসে। তবে ইরানে বসন্তটা বেশ দীর্ঘ হয় এবং বসন্তটা সত্যিকার অর্থে বসন্তের রূপ নিয়েই আসে। শীতে আর বরফে ঢেকে যাওয়া শহর-নগর, গ্রামগুলো তখন জেগে ওঠে। প্রচণ্ড শীতে গাছপালা মৃতপ্রায় অবস্থায় পড়ে থাকে। বোঝার উপায় থাকে না এগুলো জ্যান্ত! সে অবস্থা কেটে যায় বসন্তের নিবিড় ছোঁয়ায়। গাছে গাছে সবুজ পাতা গজায়, তেহরানের পার্কগুলোতে দেখা যায় গাঢ় সবুজের সমারোহ। তেহরান নগরী হয়ে পড়ে সবুজের নগরী। সেই সবুজের  সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিতে কতই না ফুলের আয়োজন করে তেহরান সিটি করপোরেশন। তবে, কেউ কখনও একটি ফুলও ছিঁড়ে দেখে না। ব্যবহারের জন্য আলাদাভাবে ফুল চাষের ব্যবস্থা করা হয়। রাস্তার পাশজুড়ে, পার্কে যেখানে  সেখানে হাসতে থাকে ইরানের বিখ্যাত গোলাপ। লাল, সাদা, গোলাপি, হলুদ, কমলা কত রকমের  গোলাপ তার ঠিক নেই। দেখা যায় টিউলিপ, ডালিয়া, কসমস, জিনিয়া, চন্দ্রমল্লিকা আরও নাম না জানা কত রকমের ফুল! এত ফুলের পরও যেন ইরানের লোকজনের সৌন্দর্য দর্শনের পিপাসা মেটে না। আরও কিছু প্রয়োজন। সমপ্রতি তেহরান নগরীর সৌন্দর্য বর্ধনে বাংলাদেশের ‘লালশাক’ ব্যবহার করা হচ্ছে। তেহরানের বড় বড় পার্কে, রাস্তার মোড়ে, ফোয়ারার পাশ জুড়ে লাগানো হচ্ছে লালশাক। গাঢ় লাল রঙের এ শাকের কদর ইরানে দিন দিন বাড়ছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ইরানপ্রবাসী বাংলাদেশীদের আফসোস। কারণ পার্কে, রাস্তার মোড়ে বা ফোয়ারার পাশে লাগানো এসব লালশাক ইরানিরা খায় না। অতএব, বাংলাদেশী কারো পক্ষেও তা নিয়ে খাওয়ার সুযোগ নেই। হাট-বাজারেও পাওয়া যায় না এ শাক; লালশাক শুধুই নগরীর সৌন্দর্য বর্ধনের উপাদান। বাংলাদেশের আরেকটি জনপ্রিয় সবজি ইরানে সৌন্দর্য বর্ধনের উপকরণ- তা হলো শিম। বিভিন্ন পার্কে এবং বাসাবাড়িতে লাল শিমের গাছ লাগাতে দেখা যায়। এ ধরনের শিমের গাছে ধরে গোলাপি রঙের ফুল। ঝুমকো হয়ে ফুটে থাকে  গোলাপি ফুলগুলো। শিমও ধরে  থোকায় থোকায়। তার সৌন্দর্যই আলাদা। গোলাপি ফুল আর লালচে শিমে ইরানি জনগণের সৌন্দর্য চর্চা হয় বটে কিন্তু এই শিম যে ইরান প্রবাসী বাংলাদেশীদের হায় আফসোস বাড়িয়ে দেয় তা কী তারা জানে! বলে রাখি- বাংলাদেশে যেসব সবজি পাওয়া যায় তার সামান্যই ইরানে পাওয়া যায়। আমাদের জনপ্রিয় সবজি ওদের সৌন্দর্য বর্ধনের উপাদান!

Comments