বাংলাদেশে জাফরান চাষ ও সম্ভাবনা

জাফরান চাষ ও সম্ভাবনা- জাফরান একটি সুন্দর ফুল বেশির ভাগ ভারতে কাশ্মীরে জন্মায়। যেটি ওজনের মধ্যে বিশ্বের সর্বাপেক্ষা মূল্যবান মসলার একটি । এইটি গ্রিসে প্রথম চাষ করা হয়েছিল। এক অজানা কারণে জাফরান ফল তৈরি করতে পারে না। যার ফলে এটা বংশ বিস্তারের জন্য মানুষের সাহয্য প‌্রয়োজন হয়। ক্রোমগুলি মাত্র এক বছর পর্যন্ত বেচে থাকে এবং এর মধ্যেই এই ক্রোমগুলিকে মাটিতে রোপন করতে হয়।

বাংলাদেশে জাফরান চাষ ও সম্ভাবনা

জাফরানের বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae
বিভাগ: Magnoliophyta
শ্রেণী: Liliopsida
বর্গ: Asparagales
পরিবার: Iridaceae
উপপরিবার: Crocoideae
গণ: Crocus
প্রজাতি: C. sativus
দ্বিপদী নাম : Crocus sativus
এইটার বাংলা নামঃ জাফরান
অন্যান্য স্থানীয় নামঃ saffron Za'afaran, Zaafaran Kesar, Zafran
বৈজ্ঞানিক নামঃ Crocus sativus পরিবারঃ Iridaceae (Iris family)





জাফরান উৎপাদনঃ
অটাম ক্রকাস (autumn crocus) নামের আইরিশ গোত্রের একটি ফুলের গর্ভদন্ড(Stigmata) থেকে উৎপাদন করা হয় জাফরান। ১পাউন্ড বা ৪৫০গ্রাম শুকনো জাফরানের জন্য ৫০ থেকে ৭৫ হাজার ফুলের দরকার হয়, এক কিলোর জন্য একলক্ষ দশ থেকে একলক্ষ ৭০ হাজার ফুল, ৪০ ঘন্টা সময় লাগে ১লক্ষ ৫০ হাজার ফুল তুলতে । অতি সহজেই আমাদের দেশে এই গাছটির চাষাবাদ সম্ভব হলেও এর কোন পরিকল্পনা বা বাণিজ্যিক উৎপাদন নেই । অতি মূল্যবান এই গাছটি আমরা বাড়ির আঙিনায়, ক্ষেত্রের আইলে এবং অল্প জমিতে জন্মিয়ে নিজের জাফরান বা জরদার রঙের প্রয়োজন মেটাতে পারি খুব সহজেই । প্রায় এক যুগ আগে দেশের ৯টি বিএডিসি উদ্যান উন্নয়ন কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে জাফরানের চাষ শুরু হয় ।

জাফরানের উৎপত্তি
জাফরান' প্রতি কেজি’র মূল্য প্রায় তিন লাখ টাকা । প্রতিবেশী দেশের কাশ্মীর থেকে এটি এনে বাজারে বিক্রি করা হয় খাবার সুস্বাদু করার জন্য । স্পেনের ‘লা মাঞ্চা’ অঞ্চলের জাফরানের সুবাস সবচেয়ে ভাল। এদের জাফরান দুইটি ক্যাটাগরীতে পাওয়া যায় ‘মাঞ্চা’ আর ‘ক্যুপে’।

জাফরানের ব্যবহার
বিরিয়ানীতে রং এর জন্য এটি ব্যবহার করা হয়। খাদ্যদ্রব্য ছাড়াও দামি প্রসাধন সামগ্রী হিসেবে জাফরান ব্যবহার্য। প্রাচীনকালে জাফরান গায়ে মাখা হতো শরীরের সৌষ্ঠব বাড়ানোর জন্য। ত্বক এর গুণে লাবণ্যময় হয়ে ওঠে। এ ছাড়া নানা রোগেও জাফরানের বহুমাত্রিক ব্যবহার লক্ষ করা যায়

বাংলাদেশে জাফরান চাষ:
বাংলাদেশে এক যুগ আগে পাবনা, রংপুর, গাজীপুর, বান্দরবান এবং ময়মনসিংহে বিএডিসি উদ্যানে পরীক্ষামূলক চাষ শুরু হয়েছিল সংশ্লিষ্ট বিভাগের উদাসীনতার কারণে ময়মনসিংহে এক যুগেও বিস্তার ঘটেনি বিশ্বের সবচাইতে দামি মসলার ফসল জাফরানের। জানা যায়, প্রাচীন যুগে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে জাফরানের সুগন্ধ ও উজ্জ্বল রঙের গুরুত্ব অনুধাবন করে এর ব্যাপক প্রচলন হয়। জাফরান উদ্ভিদতত্ত্বের দিক থেকে ইরিডাসিয়া ফ্যামিলির অন্তর্গত। আরবী ভাষায় ফারান এবং ইংরেজিতে সাফরন । জাফরানের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় তা ধীরে ধীরে কান্দাহার, খোরাসান,কাশ্মীরের বনেদী মহল ব্যবহারের মাধ্যমে ভারত উপমহাদেশে এর আগমন ঘটে।
Related Post: আসল ও নকল জাফরান চেনার উপায়
প্রায় এক যুগ আগে দেশের ৯টি বিএডিসি উদ্যান উন্নয়ন কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে জাফরানের চাষ শুরু হয়। এগুলো হচ্ছে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা, গাজীপুরের কাশিমপুর, পাবনা, রংপুর, বান্দরবান, জামালপুর,লামা এবং খুলনার দৌলতপুর বিএডিসি সার্ভিস সেন্টার। প্রতিটি বাগানে ১৫/২০টি করে গাছ লাগানো হয়। প্রতিটি গাছের পুষ্পমঞ্জুরিতে প্রায় ২৫/৩০টি করে ফুল ফোটে। বীজ তৈরি হতে সময় নেয় ৭০/৮০ দিন। মটরশুটির ন্যায় ছোট গোলাকার লাল রঙের গাছ প্রতি ২০/৩০টি করে বীজ হয়। প্রতিটি ফুটন্ত ফুলের পুংকেশর এবং স্ত্রীকেশর কাঁচা অবস্থায় কেটে আলাদা করে শুকিয়ে নিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। ৬/৭ ঘণ্টা ভিজিয়ে রং সংগ্রহ করা হয়। আশানুরূপ ফলন পাওয়ার পরও যথাযথ পদক্ষেপ আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এর চাষ হ্রাস পেতে থাকে। অভিজ্ঞ মহল জানান,জাফরান চাষের ধারাবাহিকতা থাকলে দেশের চাহিদা মিটিয়েও বিদেশে রফতানির মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হতো। জাফরানের উপকারভোগীরা জানান,জাফরানী রং অনুষ্ঠানাদিতে বনেদী পোলাও,বিরিয়ানি,জর্দা,কালিয়াতে ব্যবহার করা হয়। অনেক পানবিলাসী এর পাপড়ি পানের সাথে চর্বণ করেন। জাফরানী রং বিভিন্ন হারবাল ওষুধ প্রস্তুত প্রক্রিয়ায় ব্যবহার হয়। এর রং নান্দনিক সাজসজ্জায় তথা বনেদী পার্লারগুলোতে মেহেদির সাথে সংমিশ্রণে মোহনীয় উজ্জ্বল রং এর উত্কর্ষ বৃদ্ধিতে ব্যবহূত হচ্ছে। জাফরানী সরবত যে কোন অনুষ্ঠানে পরিবেশন যোগ্য। অভিজ্ঞ মহল জানান, অত্রাঞ্চলের মাটি জাফরান চাষের বিশেষ উপযোগী। তাই নতুন করে হলেও এর দিকে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন
আপনি জাফরান উৎপাদনে আগ্রহী হলে আজই জাফরান চাষ এর বিস্তারিত জানার জন্য কৃষি মন্ত্রনালয়ে যোগাযোগ করুন ।

Comments